রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা আবদুল হাই নদভী (মা.জি.আ)
সূফীকুল শিরোমনি আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমী (রহঃ) বলেছেন, “মাওলানা রুম হারগেজ কামেল নাশুদ; তা গোলামে শামছে তিবরীজ নাশুদ” অর্থাৎ, আমি মাওলানা রুমী ততোক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ-ওয়ালা হতে পারিনি যতোক্ষণ পর্যন্ত আমার পীর হযরত শামছে তাবরীজ (রহ:)-এর কাছে বাইয়া’ত হয়ে এলমে তাছাউফের উপর আমল করে এখলাছ হাছিল না করেছি। (মসনবী শরীফ)।
অধ্যাত্মিকতার অনুশীলন ও চর্চার ইতিহাসে বায়তুশ শরফ স্বতন্ত্র মহিমায় ভাস্বর এক ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান। পূর্ণ ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে আত্মস্থ করার মাধ্যমে তাসাউফের বিশুদ্ধ চর্চা এর দরবারের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ দরবার মানুষের নৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বায়তুশ শরফ পথহারা পথিকের আশ্রয়স্থল, সেবা, দয়া, প্রেম ও জ্ঞান-বিজ্ঞান অনুশীলন ও গবেষণার কেন্দ্র। এ দরবারের মহান প্রতিষ্ঠাতা কুতুবুল আলম শাহ্সুফী হযরত মাওলানা মীর মোহাম্মদ আখতর (রাহঃ)। অসাধারণ প্রজ্ঞা, অতুলনীয় কর্মশক্তি, ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও চারিত্রিক মাধুর্যতা দ্বারা তিনি সমসাময়িক আলেম-ওলামাসহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন।
১৯৭১ সালে হযরত কেবলার ইন্তেকালের পর একমাত্র ‘খলিফা’ হিসেবে এ বিশাল দরবারের গুরুভার যিনি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, তিনি হলেন শাহসুফি আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার (রাহঃ)। যাঁকে তিনি (হযরত কেবলা) এলম-আমল, চারিত্রিক গুণাবলী ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতার বিচারে জীবদ্দশায় খলিফায়ে আযম নিযুক্ত করে যান। তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও আধ্যাত্মিক সাধনা বলে বায়তুশ শরফ মানবতার কল্যাণে নিবেদিত একটি বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে-বিদেশে সুপরিচিতি লাভ করে। হযরত শাহ আবদুল জব্বার (রাহঃ) তাঁর সমকালে ছিলেন যুগের অন্যতম আলেমেদ্বীন, পীর-এ কামেল, মসজিদ ভিত্তিক সমাজসেবার অন্যতম পুরোধা, শিরক-বিদআত-এর বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একজন সফল লেখক, গবেষক ও অনুবাদক হিসেবে তিনি ছোট বড় ২১ টি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। ১৯৯৮ সালে ২৬ মার্চ আল্লামা শাহ আবদুল জব্বার (রাহঃ) এর ইন্তেকালের পর তাঁর দীর্ঘদিনের ছায়াসাথী বাহরুল উলুম আল্লামা শাহ মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (রাহঃ) বায়তুশ শরফের হাল ধরেন। ২০২০ সালের ২০ মে ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে আনজুমনে ইত্তেহাদসহ বায়তুশ শরফ পরিচালিত হতে থাকে।
বায়তুশ শরফের মহান মোর্শেদগণ তাঁদের কর্ম , সেবা ও দয়া দিয়ে, আধ্যাত্মিক সাধনা দিয়ে মানুষের অন্তর জয় করেছেন। কাদেরীয়া তরিকার মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের সৌরভ চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে তাঁরা দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। বায়তুশ শরফের গ্রহণযোগ্যতা আজ সার্বজনীন। লাখো পথহারা মানুষের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের প্রাণকেন্দ্র। ধর্ম ও কর্মের সমন্বয়ে একজন মানুষকে খাঁটি মুমিন মুসলমান রূপে গড়ে তোলা, ত্বরীকতের অনুসৃত পন্থায় মানবীয় গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বলে বলিয়ান করা-ই বায়তুশ শরফের মূল লক্ষ্য।