Anjuman-E Noujoan Bangladesh
انجمن نوجوان بنغلاديش
ANJUMAN-E-NOUJOAN BANGLADESH
আনজুমনে নওজোয়ান বাংলাদেশ
(একটি অরাজনৈতিক সমাজসেবী যুব সংগঠন)
রেজি. নং চট্ট: ১৯২৯/৯৬
প্রতিষ্ঠাতাঃ হাদীয়ে যামান শায়খ আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আবদুল জব্বার (রহ.)
প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯ এপ্রিল ১৯৮০
পৃষ্ঠপােষকঃ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী (ম. জি. আ.)
পীর সাহেব, বায়তুশ শরফ, চট্টগ্রাম
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ঃ বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স, ধনিয়ালাপাড়া, চট্টগ্রাম-৪১০০, বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
পটভূমি:
একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি অপূর্ব শ্রেষ্ঠ মানুষ আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির উচ্চশিখরে আরোহণ করেছে। ইহকালীন জীবনকে সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে তুলতে সে যে কত হাজার রকমের বস্তুসামগ্রী আবিষ্কার করেছে তার কোনাে ইয়াত্তা নেই। কিন্তু এত কিছুর পরও সুখ ও শান্তির শ্বেতকপোত তার নাগালের বাইরে।
দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, বংশে গোত্রে হিংসা-হানাহানির যে বহ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত তার দহনে সবকিছু জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। সুন্দর এ পৃথিবীতে এমন তাে হওয়ার কথা ছিল না। আমরা যদি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর দিকে তাকাই তবে কি দেখব?
আরবের জাহিলি সমাজের মত এক দিকে হিংসা-বিদ্বেষ, হত্যা-লুণ্ঠন, সুদ-ঘুষ-দুর্নীতি, নগ্নতা-বেহায়াপনা ও সন্ত্রাসের ফলে দেশে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অন্যদিকে কোটি কোটি বনি আদম অনাহার-অর্ধাহার, নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কষাঘাতে ধুকে ধুকে মরছে। এর ওপর প্রতি বছরের খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লক্ষ লক্ষ পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। এদের করুন আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে বারবার। এ অসহায় লাঞ্ছিত-বঞ্চিত বনি আদমের মুখে হাসি ফোটাবে কে? কে তাদের মুখে তুলে দেবে বেঁচে থাকার অন্ন, লজ্জা ঢাকার বস্ত্র এবং মাথা গোঁজার ঠাই? কোন মহাপুরুষের আহ্বানে অবসান হবে তাদের সকল দুঃখ-যাতনা, ইহকাল ও পরকাল হবে মঙ্গলময়?
হে কিশাের, হে তরুণ, হে যুবক। কান পেতে শােন এবং হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি কর। আজ থেকে প্রায় পঞ্চদশ শতাব্দী পূর্বে তােমাদের মতােই এক তরুণ মক্কার দুর্বল, অসহায়, নিরন্ন ও নিপীড়িত জনগণকে রক্ষা ও সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গঠন করেছিলেন "হিলফুল ফুযুল" বা শান্তিসংঘ নামে এক মানবতাবাদী সংগঠন যা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিধানে সক্ষম হয়েছিলাে।
কে সে তরুণ? তিনি ছিলেন আল-আমীন, চিরবিশ্বস্ত, বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ (সা.)। নবুওয়াতী জিন্দেগিতে মদীনার মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনা, শিক্ষা কার্যক্রমের সুফল ও সুকীর্তির কথা কে না জানে! তাঁর সেসব মহতী কার্যক্রম সফলভাবে বিকশিত হয় খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলে। কিন্তু দুঃখজনক যে, পরবর্তীতে মুসলিম রাজা-বাদশাহের পারস্পরিক আত্মকলহের ফলে মহানবী (সা.)-এর সেই শিক্ষা ও সুফল থেকে সাধারণ মানুষ আবার বঞ্চিত হতে থাকে। এ অবস্থায় যুগে যুগে মহানবী (সা.)-এর মিশনকে ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া হিসেবে এগিয়ে নেন হক্কানী-রাব্বানি অলী-আল্লাহ, পীর-মাশায়েখ ও ওলামায়ে কেরাম।
তাই সময়ের প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ আলেমে দ্বীন বায়তুশ শরফের পীর সাহেব মাওলানা শাহ আবদুল জব্বার (রহ.) তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করলেন যে, আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ মুরব্বিদের সংগঠন। এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রয়ােজন একদল তরুণ, ছাত্র, যুবক ও নওজোয়ান। কারণ যুব-সমাজই পারে যুগের যাবতীয় চ্যালেঞ্জ মােকাবেলা করতে।
এ পৃথিবীর সকল কল্যাণ-কর্মেই যুবসমাজের ভূমিকা অগ্রগামী। ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই হযরত ঈসা (আ.), হযরত মুসা (আ.), হযরত ইউসুফ (আ.), হযরত ইবরাহীম (আ.), হযরত ইসমাঈল (আ.) ও হযরত মুহাম্মদ (সা.)ও তরুণ বয়সে সমকালীন সমাজ-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কল্যাণ ও তাওহীদের বাণী নিয়ে অগ্রসর হন এবং মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে সমাজ থেকে যাবতীয় অকল্যাণ-অসংগতি দূরীভূত করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি আনয়ন করেছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত হিলফুল ফুযুল সর্বযুগের মুসলিম তরুণ ও যুবকদের জন্য সমাজসেবা ও দেশ গঠনের উত্তম আদর্শ। সেই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বায়তুশ শরফের পীর সাহেব মাওলানা শাহ আবদুল জব্বার (রহ.) আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশের সহযােগী সংগঠন হিসেবে বাংলার তরুণ ছাত্র-যুবকদের নিয়ে ১৯৮০ সালের ১৯ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক নিঃস্বার্থ সমাজসেবী যুবকাফেলা আনজুমনে নওজোয়ান বাংলাদেশ।
মহান আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত এবং আউলিয়ায়ে কেরামের অনুসৃত রীতি-নীতি অনুযায়ী জীবনের সবকাজই আল্লাহর ইবাদত হিসেবে গণ্য। শুধুমাত্র নামায, রােযা, হজ্ব ও যাকাতই ইবাদত নয়, যা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘােষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন, 'ওয়া আহসিনূ, ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল মুহসিনীন (তােমরা মানুষের উপকার কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরােপকারীকে ভালোবাসেন।' সূরা আল-বাকারা: ১৯৫) মহানবী (সা.) বলেছেন, 'খায়রুন্নাস মাইঁ ইয়ানফাউন নাস (মানুষের মধ্যে সে-ই উত্তম যে মানুষের সেবা করে)।' মহাকবি শেখ সা'দী (রহ.) বলেছেন, 'তরীকত বজুয খেদমতে খলক নীস্ত (তরীকত মানবসেবা ছাড়া অন্য কিছু নয়)।'
সুতরাং মানবসেবী সংগঠনের ছায়াতলে থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সাধনা প্রতিটি তরুণের লক্ষ্য হওয়া উচিত। দরদি মন নিয়ে গরীব, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবার মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজ যদি একমাত্র আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি এবং ইহকালের শান্তি ও পরকারের মুক্তির জন্য না হয় তবে সমাজে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বয়ে আনে বেশি। কারণ পরােপকার সবসময় নিঃস্বার্থ হওয়া উচিত।
আনজুমনে নওজোয়ান বাংলাদেশের পতাকাতলে সমবেত তরুণ, কিশাের, যুবক ও ছাত্ররা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুহাব্বত লাভ ও আখিরাতের মুক্তির লক্ষ্যে দেশের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম ও সমাজসেবক বায়তুশ শরফের পীর সাহেব (রহ.)-এর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনে চরিত্র গঠন ও মসজিদভিত্তিক মানব-কল্যাণে নিয়ােজিত রয়েছে।
এ সংগঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য:
ছাত্র ও যুব-সমাজকে ইসলামি শরীয়ত ও তরীকতের নিয়ম মােতাবেক সংগঠিত করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুহাব্বত লাভ এবং ইসলামের আদর্শে দেশ ও সমাজের পরিবর্তন সাধন করা এই সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
কর্মসূচি:
১. সংগঠন: ইলম, আমল ও আখলাকের উৎকর্ষ সাধন করে আল্লাহ তা'আলার প্রকৃত বান্দাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সত্যিকার উম্মত হওয়ার জন্য ছাত্র ও যুব-সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করা।
২. তাসকিয়া তা'লীম ও তারবিয়ত: সংগঠিত তরুণদের তা'লীম ও তারবিয়তের মাধ্যমে অজ্ঞতার অভিশাপ দূর করে আত্মশুদ্ধির জন্য তরীকতের নির্দেশিত পথে পরিচালনা করা এবং গোটা সমাজে এই প্রচেষ্টা সম্প্রসারিত করা।
৩. আমর বিল মা'রূফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার:
মুসলিম সমাজের উৎকর্ষতার লক্ষ্যে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের জন্য স্বয়ং আল্লাহর দেওয়া আদেশ যুব-সমাজের মাঝে ব্যাপকভাবে এই কর্মসূচির চেতনা সৃষ্টি করা এবং সেই অনুযায়ী সমাজ সংশােধনের প্রচেষ্টা চালানো।
৪. ইসলামের প্রচার ও প্রসার: মুসলমানদেরকে ইসলাম সম্পর্কে ভালােভাবে বুঝানাে ও আমল করার জন্য উৎসাহিত করা এবং অমুসলিমদের মাঝেও তাওহীদের অমীয় বাণী সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণভাবে তুলে ধরা। সর্বোপরি মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব-ভালোবাসা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানাে।
৫. খেদমতে খালক: বেকার, অসহায়, বিধবাদের সেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্য, অভাবী যুবক ও ছাত্রদের সার্বিক সহযােগিতা ও নিরক্ষর শিশু-কিশোর এবং বয়স্কদের অক্ষরজ্ঞান দানের ব্যবস্থা করা।
কর্মসূচি:
ইতােমধ্যে উক্ত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করেছে। অদূর ভবিষ্যতে এ সংগঠনের শাখা সমগ্র বাংলাদেশে কায়েম হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। কারণ অরাজনৈতিক যুবকর্মী সমাজসেবী এই সংগঠনের শিক্ষামূলক কার্যক্রম, তা'লীম-তারবিয়ত, সাহিত্যানুষ্ঠান, তাহযীব-তামাদ্দুন ও ইসলামি ঐতিহ্যের প্রচার-প্রসার, দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ তৎপরতা মানব-সেবামূলক কর্মসূচি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
ডাক দিয়ে যাই:
হে কিশাের, হে তরুণ-ছাত্র-যুবক! এসাে পরম বিশ্বাসে নব-আশ্বাসে সমবেত হই আনজুমনে নওজোয়ানের পতাকাতলে। এসাে এক সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গরীব-দুঃখী, এতিম-বিধবা ও নিরন্ন মানুষের বিবর্ণ মুখে সােনালি সূর্যের হাসি ফোটাই। সুবচন চারিত্রিক মাধুর্যে তাদের দুঃখ ভােলাই।
প্রার্থনা:
পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে এ প্রার্থনা করি, হে রাব্বুল আলামীন! তুমি এ সংগঠনকে কবুল কর, আমাদের মাঝে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় কর। মসজিদভিত্তিক মানবসেবায় যে অঙ্গীকার নিয়ে তােমার দরবারে হাত তুলেছি মা'বুদ মাওলা তা তুমি সম্পাদনের যােগ্যতা দাও আমাদেরকে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে তুমি ফুল ও ফসলে সমৃদ্ধ কর। আমীন